কবিতা

মানুষ

কাজী নজরুল ইসলাম

গাহি সাম্যের গান–
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান ,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ
ধর্মজাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের
জ্ঞাতি ।
‘পুজারী, দুয়ার খোল,
ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পুজার সময়
হলো !’
স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
দেবতার বরে আজ রাজা-
টাজা হয়ে যাবে নিশ্চয় !
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা,
খাইনা তো সাত দিন !’
সহসা বন্ধ হল মন্দির , ভুখারী ফিরিয়া চলে
তিমির রাত্রি পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক
জ্বলে !
ভুখারী ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পুজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয় !’
মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই
কুটিকুটি !
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
বলে, ‘বাবা, আমি ভুখা ফাকা আছি আজ
নিয়ে সাত দিন !’
তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল
মোল্লা–”ভ্যালা হলো দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গে-ভাগাড়ে গিয়ে ! নামাজ পড়িস
বেটা ?”
ভুখারী কহিল, ‘না বাবা !’ মোল্লা হাঁকিল-
‘তা হলে শালা
সোজা পথ দেখ !’ গোস্ত-
রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা !
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে–
“আশিটা বছর কেটে গেল,
আমি ডাকিনি তেমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু !
তব মজসিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল
দুয়ারে চাবী !”
কোথা চেঙ্গিস, গজনী-মামুদ, কোথায়
কালাপাহাড় ;
ভেঙ্গে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-
দ্ব ার !
খোদার ঘরে কে কপাট লাগায় কে দেয়
সেখানে তালা ?
সব দ্বার এর খোলা র’বে, চালা হাতুড়ি শাবল
চালা !
হায় রে ভজনালয়
তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের
জয় !
মানুষেরে ঘৃণা করি
ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল
চুম্বিছে মরি মরি
ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর
করে কেড়ে
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই
মানুষেরে মেরে ।
পুজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল !–মুর্খরা সব শোনো
মানুষ এনেছে গ্রন্থ,–গ্রন্থ আনেনি মানুষ
কোনো ।
আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মদ
কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর,-বিশ্বের সম্পদ,
আমাদেরি এরা পিতা পিতামহ, এই আমাদের
মাঝে
তাঁদেরি রক্ত কম-
বেশী করে প্রতি ধমনীতে বাজে !
আমরা তাঁদেরি সন্তান , জ্ঞাতি ,
তাঁদেরি মতন দেহ
কে জানে কখন মোরাও
অমনি হয়ে যেতে পারি কেহ ।
হেস না বন্ধু ! আমার আমি সে কত অতল অসীম
আমিই
কি জানি কে জানে কে আছে আমাতে মহামহিম

হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি,
তোমাতে মেহেদি ঈসা,
কে জানে কাহার অন্ত ও আদি, কে পায় কাহার
দিশা ?
কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই,
কাহারে মারিছ লাথি ?
হয়তো উহারই বুকে ভগবান জাগিছেন
দিবারাতি !
অথবা হয়ত কিছুই নহে সে, মহান উচ্চ নহে,
আছে ক্লেদাক্ত ক্ষত-বিক্ষত পড়িয়া দুঃখ –
দহে,
তবু জগতের যত পবিত্র গ্রন্থ ভজানালয়
ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয় !
হয়ত ইহারি ঔরসে ভাই ইহারই কুটীর -বাসে
জন্মিছে কেহ-জোড়া নাই যার জগতের
ইতিহাসে !
যে বাণী আজিও শোনেনি জগৎ,
যে মহাশক্তিধরে
আজিও বিশ্ব দেখেনি–হয়ত আসিছে সে এরই
ঘরে !
ও কে ? চন্ডাল ? চমকাও কেন ? নহে ও ঘৃণ্য
জীব !
ওই হতে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব

আজ চন্ডাল, কাল হতে পারে মহাযোগী-সম্রাট,
তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে,
করিবে নান্দী পাঠ ।
রাখাল বলিয়া কারে কর হেলা, ও-
হেলা কাহারে বাজে !
হয়ত গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল
সাজে !
চাষা বলে কর ঘৃণা !
দেখো চাষা রুপে লুকায়ে জনক বলরাম
এলো কি না !
যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারও ধরিল হাল
তারাই আনিল অমর বাণী–
যা আছে র’বে চিরকাল ।
দ্বারে গালি খেয়ে ফিরে যায়
নিতি ভিখারী ও ভিখারিনী,
তারি মাঝে কবে এলো ভোলা -নাথ
গিরিজায়া, তা কি চিনি !
তোমার ভোগের হ্রাস হয় পাছে ভিক্ষা-
মুষ্টি দিলে
দ্বার দিয়ে তাই মার
দিয়ে তুমি দেবতারে খেদাইলৈ ।
সে মোর রহিল জমা -
কে জানে তোমারে লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে
বন্ধু, তোমার বুক-ভরা লোভ দু’চোখ স্বার্থ ঠুলি,
নতুবা দেখিতে,
তোমারে সেবিতে দেবতা হয়েছে কুলী ।
মানুষের বুকে যেটুকু দেবতা, বেদনা মথিত
সুধা
তাই লুটে তুমি খাবে পশু ?
তুমি তা দিয়ে মিটাবে ক্ষুধা ?
তোমার ক্ষুধার আহার তোমার মন্দোদরীই
জানে
তোমার মৃত্যু-বাণ আছে তব প্রাসাদের
কোনখানে !
তোমারি কামনা-রাণী
যুগে যুগে পশু ফেলেছে তোমায় মৃত্যু
বিবরে টানি ।

 

 

মানুষ

কাজী নজরুল ইসলাম

আবৃত্তিকার :ফারজানা রেজা স্নিগ্ধা

সৎ পাত্র

সুকুমার রায়

শুনতে পেলুম পোস্তা গিয়ে—
তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ?
গঙ্গারামকে পাত্র পেলে?
জানতে চাও সে কেমন ছেলে ?
মন্দ নয়, সে পাত্র ভালো—
রঙ যদিও বেজায় কালো;
তার উপরে মুখের গঠন
অনেকটা ঠিক প্যাঁচার মতন।
বিদ্যে বুদ্ধি? বলছি মশাই—
ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়!
উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে
ঘায়েল হয়ে থামল শেষে।
বিষয় আশয়? গরিব বেজায়—
কষ্টে–সৃষ্টে দিন চলে যায়। 
মানুষ তো নয় ভাইগুলো তার—
একটা পাগল একটা গোঁয়ার;
আরেকটি সে তৈরি ছেলে,
জাল ক’রে নোট গেছেন জেলে।
কনিষ্ঠটি তবলা বাজায়
যাত্রাদলে পাঁচ টাকা পায়।
গঙ্গারাম তো কেবল ভোগে
পিলের জ্বর আর পাণ্ডু রোগে।
কিন্তু তারা উচ্চ ঘর,
কংসরাজের বংশধর!
শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের
কি যেন হয় গঙ্গারামের।—
যাহোক, এবার পাত্র পেলে,
এমন কি আর মন্দ ছেলে?

 

সৎ পাত্র

সুকুমার রায়

আবৃত্তিকার : তাসফিয়া জাহান তাহিয়া

এক আল্লাহ্ জিন্দাবাদ

কাজি নজরুল ইসলাম

উহার প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ;
আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।
উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,
আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ।

উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই;
নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই!
ওরা মরিবেনা, যুদ্ব বাধিঁলে ওরা লুকাইবে কচুবনে,
দন্তনখরহীন ওরা তবু কোলাহল করে অঙ্গনে ।

ওরা নির্জীব; জিব নাড়ে তবু শুধূ স্বার্থ ও লোভবশে,
ওরা জিন,প্রেত, যজ্ঞ, উহারা লালসার পাঁকে মুখ ঘষে ।
মোরা বাংলার নব যৌবন,মৃত্যুর সাথে সন্তরী,
উহাদের ভাবি মাছি পিপীলিকা, মারি না ক তাই দয়া করি।

মানুষের অনাগত কল্যাণে উহারা চির অবিশ্বাসী,
অবিশ্বাসীরাই শয়তানী-চেলা ভ্রান্ত-দ্রষ্টা ভুল-ভাষী।
ওরা বলে, হবে নাস্তিক সব মানুষ, করিবে হানাহানি ।
মোরা বলি, হবে আস্তিক, হবে আল্লাহ মানুষে জানাজানি।

উহারা চাহুক অশান্তি; মোরা চাহিব ক্ষমাও প্রেম তাহার,
ভূতেরা চাহুক গোর ও শ্মশান, আমরা চাহিব গুলবাহার !
আজি পশ্চিম পৃথিবীতে তাঁর ভীষণ শাস্তি হেরি মানব
ফিরিবে ভোগের পথ ভয়ে, চাহিবে শান্তি কাম্য সব।

হুতুম প্যাচারা কহিছে কোটরে, হইবেনা আর সূর্যোদয়,
কাকে আর টাকে ঠোকরাইবেনা, হোক তার নখ চষ্ণু ক্ষয়।
বিশ্বাসী কভু বলেনা এ কথা, তারা আলো চায়, চাহে জ্যোতি;
তারা চাহে না ক এই উৎপীড়ন এই অশান্তি দূর্গতি।

দাঙ্গা বাঁধায়ে লুট করে যারা, তার লোভী , তারা গুন্ডাদল
তার দেখিবেনা আল্লাহর পথ চিরনির্ভয় সুনির্মল ।
ওরা নিশিদিন মন্দ চায় , ওরা নিশিদিন দ্বন্ধ চায়,
ভূতেরা শ্রীহীন ছন্দ চায়, গলিত শবের গন্ধ চায়!

নিত্য সজীব যৌবন যার, এস এস সেই নৌ-জোয়ান
সবক্লৈব্য করিয়েছে দূর তোমাদেরই চির আত্বদান !
ওরা কাদা ছুড়ে বাঁধা দেবে ভাবে -ওদের অস্ত্র নিন্দাবাদ,
মোরা ফুল ছড়ে মারিব ওদের, বলিব - ‘‘এক আল্লাহ জিন্দাবাদ”

 

এক আল্লাহ জিন্দাবাদ

কাজি নজরুল ইসলাম

আবৃ্ত্তিকার: ফাহিম

 

পাঞ্জেরি

ফররুখ আহমেদ

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?


দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষে
কোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে?
এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’ব
তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব
অস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী।
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি।

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?


বন্দরে বসে যাত্রীরা দিন গোনে,
বুঝি মৌসুমী হাওয়ায় মোদের জাহাজের ধ্বনি শোনে,
বুঝি কুয়াশায়, জোছনা- মায়ায় জাহাজের পাল দেখে।
আহা, পেরেশান মুসাফির দল।
দরিয়া কিনারে জাগে তক্দিরে
নিরাশায় ছবি এঁকে!
পথহারা এই দরিয়া- সোঁতারা ঘুরে
চলেছি কোথায়? কোন সীমাহীন দূরে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
একাকী রাতের গান জুলমাত হেরি!

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?


শুধু গাফলতে শুধু খেয়ালের ভুলে,
দরিয়া- অথই ভ্রান্তি- নিয়াছি ভুলে,
আমাদেরি ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি
দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী।
মোদের খেলায় ধুলায় লুটায়ে পড়ি।
কেটেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী।
সওদাগরের দল মাঝে মোরা ওঠায়েছি আহাজারি,
ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দনধ্বনি আওয়াজ শুনছি তারি।
ওকি বাতাসের হাহাকার,- ও কি
রোনাজারি ক্ষুধিতের!
ও কি দরিয়ার গর্জন,- ও কি বেদনা মজলুমের!
ও কি ধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী।

পাঞ্জেরি!
জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি হেরি,
জাগো অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি হেরি!
দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরি, কত দেরি!!

 

পাঞ্জেরি

ফররুখ আহমেদ

আবৃত্তিকার : আব্দুল্লাহিল খালিদ

নদীর স্বপ্ন

বুদ্ধদেব বসু

কোথায় চলেছো ? এদিকে এসো না!

দুটো কথা শোনো দিকি,

এই নাও-এই চকচকে, ছোটো,

নতুন রুপোর সিকি।

ছোকানুর কাছে দুটো আনি আছে,

তোমায় দিচ্ছি তাও,

আমাদের যদি তোমার সঙ্গে

নৌকায় তুলে নাও।

নৌকা তোমার ঘাটে বাঁধা আছে-

যাবে কি অনেক দূরে?

পায়ে পড়ি, মাঝি, সাথে নিয়ে চলো

মোরে আর ছোকানুরে।

আমারে চেনো না? আমি যে কানাই।

ছোকানু আমার বোন।

তোমার সঙ্গে বেড়াবো আমরা

মেঘনা, পদ্মা, শোণ।

শোনো, মা এখন ঘুমিয়ে আছেন

দিদি গেছে ইশকুলে,

এই ফাঁকে মোরে-আর ছোকানুরে-

নৌকোয় নাও তুলে।

কোনো ভয় নেই-বাবার বকুনি

তোমায় হবে না খেতে,

যত দোষ সব আমরা-না, আমি

একা নেবো মাথা পেতে।

 

অনেক রঙের পাল আছে, মাঝি?

বেগুনি, বাদামি, লাল?

হলদেও?-তবে সেটা দাও আজ,

বেগুনিটা দিয়ো কাল।

সবগুলো নদী দেখাবে কিন্তু!

আগে পদ্মায় চলো,

দুপুরের রোদে ঝলমলে জল

বয়ে যায় ছলোছলো।

শুয়ে-শুয়ে দেখি অবাক আকাশ,

আকাশ ম-স্ত বড়ো,

পৃথিবীর সব নীল রং বুঝি

সেখানে করেছে জড়ো।

ঝাঁকে ঝাঁকে বেঁকে ঐ দ্যাখো পাখি

উড়ে চলে যায় দূরে

উঁচু থেকে ওরা দেখতে কী পায়

মোরে আর ছোকানুরে?

ওটা কী? জেলের নৌকা? তাই তো!

জাল টেনে তোলা দায়,

 

রূপোলি নদীর রূপোলি ইলিশ-

ইশ, চোখে ঝলসায়!

ইলিশ কিনলে? -আঃ, বেশ, বেশ,

তুমি খুব ভালো, মাঝি।

উনুন ধরাও, ছোকানু দেখাক

রান্নার কারসাজি।

পইঠায় বসে ধোঁয়া-ওঠা ভাত,

টাটকা ইলিশ-ভাজা-

ছোকানু রে, তুই আকাশের রানী,

আমি পদ্মার রাজা।

 

নদী-স্বপ্ন

বুদ্ধদেব বসু

আবৃত্তিকার: সাবিহা ইসলাম জিকরা

কোন এক মাকে

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

“কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পরেছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর আমি
ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি।
খোকা তুই কবে আসবি ?
কবে ছুটি?”
চিঠিটা তার পকেটে ছিল
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।

“মাগো, ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে।
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা,
তাই কি হয়?
তাইতো আমার দেরি হচ্ছে।
তোমার জন্যে
কথার ঝুরি নিয়ে
তবেই না বাড়ি ফিরবো।

লহ্মী মা,
রাগ ক’রো না,
মাত্রতো আর ক’টা দিন।”
“পাগল ছেলে,”
মা পড়ে আর হাসে,
“তোর ওপরে রাগ ক’রতে পারি !”
নারিকেলের চিড়ে কোটে,
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে,
এটা-সেটা
আর কত কী !
তার খোকা যে বাড়ি ফিরবে
ক্লান্ত খোকা।
কুমড়ো ফুল
শুকিয়ে গেছে,
ঝ'রে পড়েছে ডাঁটা,
পুঁই লতাটা নেতানো
“খোকা এলি ?”
ঝাপসা চোখে মা তাকায়
উঠানে উঠানে
যেখানে খোকার শব
শকুনীরা ব্যবচ্ছেদ করে।

এখন
মা’র চোখে চৈত্রের রোদ
পুরিয়ে দেয় শকুনীদের।
তারপর
দাওয়ায় ব’সে
মা আবার ধান ভানে,
বিন্নি ধানের খই ভাজে,
খোকা তার
কখন আসে কখন আসে!

এখন
মা’র চোখে শিশির-ভোর
স্নেহের রোদে ভিটে ভ’রেছে।

 

কোন এক মাকে
-আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

আবৃত্তি : জান্নাতুর ফেরদাউস জুঁই