পলাশী পূরাণ ও অনাগত বিজয়ধ্বনি

পলাশী পূরাণ ও অনাগত বিজয়ধ্বনি

পলাশী পূরাণ ও অনাগত বিজয়ধ্বনি
কবি:আসাদ বিন হাফিজ
আবৃত্তি : তালহা যুবায়ের 


সিরাজের রক্তে পা ডুবিয়ে যে ইংরেজ
হার্মাদের মত ঢুকে পড়েছিল আমাদের ঘরে
আজ বারবার তাদের কথাই মনে পড়ছে শুধু।
কী বেদনাবিধুর সে দিন!
কী বেদনাবিধুর সে রাত!
সমুদ্রের পর সমুদ্র পেরিয়ে কী করে একদল ডাকাত এসে
দখল করে নিতে পারে দুর্ভেদ্য দুর্গ, রাজকোষ, সিংহাসন?


আহ ২৩ শে জুন!
বুকের ভেতর থেকে বুলেটের মত বেরিয়ে আসছে
ঘৃণা ও ক্ষোভের বারুদ। 
বেরিয়ে আসছে কামানের গোলার মত অনর্গল ক্রোধ।
কী হতো ভূমিকম্পে তলিয়ে গেলে বেঈমানের শহর!
কী হতো গযবের আগুনে পুড়ে গেলে লোভের লকলকে জিভ!
ধিক মিরজাফর! ধিক জগতশেঠ! ধিক রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ,
ঘষেটি বেগম! ধিক বিদেশী পা চাটা দেশদ্রোহী দালালের দল!


তেইশে জুন মানেই অশুভ দালালের উত্থান।
তেইশে জুন মানে পোষা সাপের ছোবলে নীল মৃত্যু।
তেইশে জুন মানে আমবাগানে ডুবে যাওয়া সেই বেদনাবিধুর সূর্যাস্ত,

যে ডুবে গেলে পরাধীনতার সাগরে ডুবে যায় ঘুমঘোরে আচ্ছন্ন জাতির কাঙ্খিত স্বাধীনতা।


তেইশে জুন মানে কুটিল আধিপত্যবাদ।
তেইশে জুন মানে স্বাধীনতার আজন্মশত্রু লোভী শিয়ালের অনাহুত হুক্কাহুয়া।
তেইশে জুন মানে পলাশীর আম্রকাননে বেঈমানের বিষাক্ত কামড়।
লক্ষ জনতার সামনে ডুবে যাওয়া চির কাঙ্খিত প্রিয় স্বাধীনতা।


তেইশে জুন বলে গেল,
তোমার নিষ্ক্রিয়তাই তোমার স্বাধীনতা হারানোর জন্য যথেষ্ট।
তেইশে জুন বলে গেল,
একটি জাতিকে পরাধীন করার জন্য দরকার মাত্র একজন মীরজাফর।
তেইশে জুন বলে গেল, 
সময়মত সাপ না মারলে সে ছোবল হানবেই।


তারপর।
তারপর ইতিহাস। দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী।
রক্ত আর ঘামের পুরাণ। 
বঙ্গোপসাগর ভরা কান্নার কলরোল।
পাহাড়ে পাহাড়ে দীঘল দীর্ঘশ্বাস।
সবুজ ঘাসের মাঠে প্দদলিত কৃষ্ণচূড়া।
পলাশীর আম্রকাননে লাল গোলাপের মৃত্যু।
তারপর রক্ত, রক্ত, রক্ত.....


তারপর ঘুরে দঁড়ানো। 
তারপর নতুন ইতিহাস।
তারপর টিপু সুলতান। 
তারপর তিতুমীর।
তারপর ফকির বিদ্রোহ। 
তারপর সিপাহী বিপ্লব।
তারপর হিমালয়, প্রমত্ত পদ্মা। 
তরঙ্গের পর তরঙ্গ।


তারপর হাজী শরিয়তউল্লাহ।
 তারপর মহাত্মা গান্ধী। প্যাটেল। 
তারপর কায়েদে আযম। 
তারপর মাওলানা মোহাম্মদ আলী, 
মাওলানা শওকত আলী।
তারপর হাজী মহসিন, চিত্তরঞ্জন দাস।
তারপর নজরুল, আব্বাসউদ্দিন। 
তারপর....
তারপর আবারো লাল রক্ত। 
তারপর ভগীরথীর তীরে মীরজাফরের ক্রমাগত কান্না ও বিলাপের ধ্বনি।
তারপর ভারত, তারপর পাকিস্তান।
স্বাধীনতা, মুক্তি। 
দুশো বছরের সুদীর্ঘ রাত পেরিয়ে স্বাধীনতার নতুন সূর্যোদয়।
ঝলমলে ভোর। পুষ্পের সৌরভ। মুক্ত বিহঙ্গের বিজয় কোরাস।
মনে রেখো, প্রতিটি সূর্যাস্ত মানে, 
সামনে শুধু অনাগত ভোর। কুসুম সকাল।
আর সকাল মানেই জীবনের কল্লোল।