হেড অফিসের বড়বাবু লোকটি বড় শান্ত,
তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনো জান্ত?
দিব্যি ছিলেন খোসমেজাজে চেয়ারখানি চেপে,
একলা বসে ঝিম্ঝিমিয়ে হঠাৎ গেলেন ক্ষেপে!
আঁৎকে উঠে হাত-পা ছুঁ'ড়ে চোখটি ক’রে গোল,
হটাৎ বলেন, “গেলুম গেলুম, আমায় ধ’রে তোল!”
তাই শুনে কেউ বদ্যি ডাকে, কেউ-বা হাঁকে পুলিশ,
কেউ-বা বলে, “কামড়ে দেবে সাবধানেতে তুলিস।”
ব্যস্ত সবাই এদিক-ওদিক করছে ঘোরাঘুরি—
বাবু হাঁকেন, “ওরে আমার গোঁফ গিয়েছে চুরি!”
গোঁফ হারানো! আজব কথা! তাও কি হয় সত্যি?
গোঁফ জোড়া তো তেমনি আছে, কমে নি এক রত্তি।
সবাই তাঁরে বুঝিয়ে বলে, সামনে ধরে আয়না,
মোটেও গোঁফ হয়নি চুরি, কক্ষনো তা হয় না।
রেগে আগুন তেলে বেগুন, তেড়ে বলেন তিনি,
“কারো কথার ধার ধারিনে, সব ব্যাটাকেই চিনি।
“নোংরা ছাঁটা খ্যাংরা ঝাঁটা বিচ্ছিরি আর ময়লা,
“এমন গোঁফ তো রাখত জানি শ্যামবাবুদের গয়লা।
“এ গোঁফ যদি আমার বলিস করব তোদের জবাই”—
এই না বলে জরিমানা কল্লেন তিনি সবায়।
ভীষণ রেগে বিষম খেয়ে দিলেন লিখে খাতায়—
“কাউকে বেশি লাই দিতে নেই, সবাই চড়ে মাথায়।
“আফিসের এই বাঁদরগুলো, মাথায় খালি গোবর
“গোঁফ জোড়া যে কোথায় গেল কেউ রাখে না খবর।
“ইচ্ছে করে এই ব্যাটাদের গোঁফ ধরে খুব নাচি,
“মুখ্যুগুলোর মুণ্ডু ধরে কোদাল দিয়ে চাঁচি।
“গোঁফকে বলে তোমার আমার—গোঁফ কি কারো কেনা?
“গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।”
গোঁফ চুরি
সুকুমার রায়
আবৃত্তিকার: মালিহা আনজুম মীম