হিল্লোল শিল্পীগোষ্ঠী

নোয়াখালী শহর

“শুদ্ধ গানে সবার প্রাণে উঠবে আবার কলরোল, সবাইকে ডেকে যায় ঐ আগামীর হিল্লোল”


হিল্লোল শিল্পীগোষ্ঠী, নোয়াখালী


বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে উপকূলীয় জনপদ বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত নোয়াখালী জেলা। নোয়াখালী নামের সাথে মিশে আছে বহু স্মৃতি বিজড়িত গৌরবময় কীর্তি। নোয়াখালী জেলাকে বলা হয় দ্বিতীয় আরব, কেননা নোয়াখালীর আলেমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামের সুমহান বাণী মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে নোয়াখালী কৃতী সন্তান 'বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন' অন্যতম। এ জেলার সর্বদক্ষিণে এক বিশাল অংশ নিয়ে জুড়ে রয়েছে আরেক দেশসেরা সৌন্দর্যের প্রতীক 'নিঝুম দ্বীপ'। বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জহির রায়হানের জন্মস্থান নোয়াখালী জেলায়। নোয়াখালী জেলাতে যে সকল সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন নোয়াখালী ‘হিল্লোল শিল্পীগোষ্ঠী'।


১৯৮৮ সালের শেষের দিকে "শুদ্ধ গানে সবার প্রাণে উঠবে আবার কলরোল সবাইকে ডেকে যায় আগামীর হিল্লোল” এ স্লোগানকে সামনে রেখে নোয়াখালীর প্রাণকেন্দ্র মাইজদী শহরে, বাংলাদেশের সুস্থ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ কবি মতিউর রহমান মল্লিকের নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক আলাউদ্দিন ভাই এর নেতৃত্বে শুরু হয় এই সংগঠনের সোনালি অগ্রযাত্রা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সঙ্গীত সাধনা ও নাটক প্রদর্শনীর মাধ্যমে এ অঞ্চলে রেখে চলেছে উল্লেখযোগ্য অবদান।

 

সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অডিও ও ভিজ্যুয়াল অ্যালবাম এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটক ও নাটিকা প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে এ সংগঠনটি। হিল্লোল শিল্পীগোষ্ঠী নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি জাতীয় দিবসসমূহ পালন, বিবাহ অনুষ্ঠানে পরিবেশনা, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভ্রাম্যমাণ পরিবেশানা, পথনাটক, র‍্যালি, প্রতিযোগিতা, টিভি চ্যানেলে গান পরিবেশনাসহ নানা রকম কাজ করে যাচ্ছে। পরিচালনা পরিষদের অকান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় এবং তাদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে ‘হিল্লোল শিল্পীগোষ্ঠী' সকলের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে।


হিল্লোল শিল্পীগোষ্ঠীর ৪টি বিভাগ আছে, যথা-


(১) সঙ্গীত বিভাগ
সঙ্গীতের জগতে হিল্লোল শিল্পীগোষ্ঠী বহুদিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে। ২০০৯ সালে হিল্লোল শিল্পীগোষ্ঠীর প্রথম অডিও অ্যালবাম ‘পথ চলা' প্রকাশিত হয়। ২০১১ সালে প্রথম ভিজ্যুয়াল অ্যালবাম 'জীবনের গান' প্রকাশিত হয় এবং হিল্লোলের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাতীয় শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'দূরবীন' প্রদর্শিত হয়। ২০১৭ সালে দীপ্ত টিভিতে ইসলামী গানের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান 'সুরের দরিয়া'য় হিল্লোল শিল্পীগোষ্ঠীর কিশোর শিল্পী নাজিফ আদনান প্রথম স্থান অর্জন করে পবিত্র ওমরা করার টিকেট পায়। এছাড়াও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ‘সেরাদের সেরা-১৭' তে শিশু শিল্পী মুজাহিদুল ইসলাম মেরাজ ৫ম স্থান লাভ করে।


(২) ক্বিরআত বিভাগ
ক্বেরাত বিভাগেও হিল্লোল বহুগুণে এগিয়ে। হিল্লোলের ক্বেরাত বিভাগের ক্বারীরা দেশ-বিদেশের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে হিল্লোলের সাবেক কেরাত পরিচালক (বর্তমানে সহকারী পরিচালক) কারী সাইফুল ইসলাম ২০১০ সালে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন জাতীয় ক্বেরাত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জাতীয় পর্যায়ে ২য় স্থান অর্জন করে এবং সুদূর মিশরে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ৭ম স্থান অর্জন করে এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত OIC নিযুক্ত আন্তঃ ক্বিরাত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ৩য় স্থান অর্জন করে। এ ছাড়া ক্বেরাত বিভাগের ছাত্র হাফেজ আরাফাত ২০১৩ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আন্তঃ হিফজুল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ১ম স্থান অর্জন করে।


(৩) থিয়েটার বিভাগ
অন্যান্য বিভাগের ন্যায় এ বিভাগ ও পিছিয়ে নেই। হিল্লোলের থিয়েটার বিভাগ মূল বিভাগ থেকে আলাদা, কাজের সুবিধার্থে থিয়েটার বিভাগকে ২০১৪ সালে সম্পূর্ণ আলাদা করা হয়। থিয়েটার বিভাগ ‘মেঘনা থিয়েটার' নামে ইতোমধ্যে নোয়াখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ‘মেঘনা থিয়েটার'র উদ্যোগে যথাক্রমে ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে নোয়াখালী শিল্পকলা একাডেমিতে পরপর তিনটি নাট্য উৎসব করা হয়। এ নাট্য উৎসবগুলোর মধ্যে নাটক প্রদর্শিত হয় “কিপ্টা ঠকানো কঠিন' (১ম এবং ২য় পর্ব) 'অপচয়' এবং 'অনুদান'। মেঘনা থিয়েটারের ব্যানারে শর্ট ফিল্মগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ফেসবুক প্রেম, প্রয়োজন, পাখির ভাষা, লাও সালাম, সিনিয়র জুনিয়র, রক্তদান এবং ধারণা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া থিয়েটারের অন্যতম শর্ট ফিল্ম 'ধারণা' ২০১৭ সসাস আয়োজিত শর্ট ফিল্ম প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জন ও রচিয়তা নাসির পারভেজ সেরা স্ক্রিপ রাইটার হিসেবে নির্বাচিত হন এবং 'সেরাদের সেরা - ২০১৭' প্রতিযোগিতায় শিশু শিল্পী পারভেজ হোসেন আকাশ অভিনয় 'ক' গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বর্ণ পদক অর্জন করে।


(৪) আবৃত্তি বিভাগ
এ বিভাগের অনন্য কৃতিত্ব, উক্ত শিল্পীগোষ্ঠীর আবৃত্তিশিল্পীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে ২০১৬ সালে 'সেরাদের সেরা-১৬' প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে শিশু শিল্পী আয়েশা মাহজাবিন আলম দিপ্তী সেরা দশে নবম স্থান অর্জন করে ।

উৎসবসমূহ
সাংস্কৃতিক উৎসব- ২০০৪, ২০০৯ ও ২০১১

নাট্য উৎসব - ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭
নাতে রাসূল (সা.) সন্ধ্যা- ২০১০, ২০১১ ও ২০১২


শিল্পী সংবর্ধনা
নোয়াখালী জেলার বিশেষ করে শহরাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জনকারীকে নোয়াখালী পৌর মেয়রের উপস্থিতিতে ২০১১ ও ২০১২ সালে হিল্লোলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। যা জেলা শহরের বিভিন্ন অভিভাবক মহলে ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে হিল্লোল শিল্পীগোষ্ঠী ও সুস্থ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।


প্রকাশনাসমূহ-

অডিও
পথ চলা- ২০০৯


ভিজ্যুয়াল

জীবনের গান- ২০১১


নাটক
অপচয়
কিপ্টা ঠকানো কঠিন (১ম পর্ব ও ২য় পর্ব)

অনুদান


শর্ট ফিল্ম

ফেসবুক প্রেম

ধারণা
প্রয়োজন
সিনিয়র-জুনিয়র
অল্প হাদিয়ার দাওয়াখানা
রক্তদান
লাও সালাম
পাখির ভাষা মিথ্যা কিন্তু মিথ্যা নয়
দল আছে তো বল আছে

 

যারা এই তরীর কাণ্ডারী ছিলেন
(১) অধ্যাপক আলাউদ্দিন (১৯৮৮-১৯৮৯)

(২) সাইফুল ইসলাম (১৯৯০)
(২) নাসির উদ্দিন (১৯৯১-১৯৯৩)

(৩) অধ্যাপক সালাউদ্দিন (১৯৯৪-১৯৯৯)

(৪) অলি উদ্দিন মানিক (২০০০-২০০৩)
(৫) এ এস এম ইখলাসুল হক (২০০৪-২০০৫)

(৬) এ টি এম আব্দুস সবুর (২০০৬)
(৭) ফয়েজ উল্লাহ মাসুম (২০০৭- জুন, ২০০৮)
(৮) মাজহারুল আলম রাসেল (জুন, ২০০৮- ডিসেম্বর, ২০০৮)
(৯) মাহফুজুর রহমান রিহান (২০০৯-২০১০)
(১০) মাজহারুল আলম রাসেল (২০১১-২০১২)
(১১) আকরাম উদ্দিন (২০১৩- মার্চ, ২০১৫)

(১২) মোহাম্মাদ ইয়াছিন (২০১৫ আংশিক)

(১৩) আনোয়ার হোসেন (২০১৬)

(১৪) মোহাম্মাদ ইয়াছিন (মার্চ, ২০১৭)
(১৫) মাসুম বিল্লাহ (মার্চ, ২০১৭-২০১৮ বর্তমান)